আইএলটিএস পরীক্ষায় ভালো করার উপায়

যখন কোন শিক্ষার্থী বিদেশে পড়াশোনার জন্য স্বপ্ন দেখে তখন তার মধ্যে একটা ভয় কাজ করে সেটি হলো আইএলটিএস পরীক্ষা দেয়া।এর অন্যতম কারণ হলো আমাদের শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকে বাংলা মিডিয়ামে লেখাপড়া কোরে আসছে কিন্তু আইএলটিএস পরীক্ষা হয় ইংরেজীতে যেটা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর জন্য চ্যালেঞ্জিং।যার কারণে তারা এই পরীক্ষা দিতে চাইনা।আমি আজকে আমার এই লেখাটির মাধ্যমে আইএলটিএস পরীক্ষায় কিভাবে ভালো করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।


পরীক্ষার সম্বন্ধে ভালোভাবে জানা

আইএলটিএস পরীক্ষা দেয়ার জন্য সর্বপ্রথম যে কাজটি করতে হবে সেটি হল এই পরীক্ষাটি সম্বন্ধে ভালোভাবে জানা।কারণ যদি আপনার মধ্যে পরীক্ষাটি কেমন হবে এই নিয়ে কোন ধারণা না থাকে তাহলে আপনি কখনো আশানুরূপ রেজাল্ট করতে পারবেন না। আইএলটিএস পরীক্ষাটি হল মূলত একটি কৌশলী পরীক্ষা।এই পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার পূর্বশর্ত হলো এই পরীক্ষার কৌশল গুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করা। এই পরীক্ষাটির মূলত চারটি অংশ থাকে তাহলো স্পিকিং,রিডিং,লিসেনিং এবং রাইটিং। সাধারণত রিডিং, রাইটিং ,লিসেনিং একইদিনে সংঘটিত হয় এবং স্পিকিং অন্য একদিনে হয়ে থাকে।আইএলটিএস পরীক্ষার ফলাফল ব্যান্ড আকারে করা হয়ে সাধারণত ব্যান্ড 9  সবথেকে ভালো এবং ব্যান্ড 0 মানে ফেইল ধরা হয়ে থাকে।সাধারণত ইউনিভার্সিটি,দেশ,সাবজেক্ট ভেদে আইএলটিএস এর ব্যান্ড নির্ভর করে।মানে ইউনিভার্সিটি এর উপর নির্ভর করে আইএলটিএস স্কোর কত হতে হবে ।বেশিরভাগ ইউনিভার্সিটি ব্যান্ড স্কোর 6 হলে অ্যাডমিশোন দিয়ে দেয়। যেইসব ইউনিভার্সিটি বিশ্বের মধ্যে টপ রাঙ্কিং এ আছে সেগুলা ব্যান্ড স্কোর 8 কিংবা 9 চায়। তাই যদি আপনি ইংরেজিতে দুর্বল হয়ে থাকেন তাহলে ইউনিভার্সিটি এমন নির্বাচন করুন যারা 6 অথবা 6.5 হলে এডমিশন দিয়ে দেয়। আর যদি আপনি ইংরেজিতে ভালো হয়ে থাকেন তাহলে আপনি বিশ্বের যেকোনো টপ রাঙ্কিং ইউনিভার্সিটি তে এডমিশন নিতে পারেন ।কেউ যদি আইএলটিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রথমবার আশানুরূপ ফলাফল না পাই তাহলে সে দ্বিতীয় ,তৃতীয় কিংবা চতুর্থবার আইএলটিএস পরীক্ষা দিতে পারবে।একজন শিক্ষার্থী সাধারণত বছরে যতবার ইচ্ছা ততবার আইএলটিএস পরীক্ষা দিতে পারবে কিন্তু আইএলটিএস পরীক্ষা যারা সংঘটিত করে তারা বলে আগে ভালো করে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে তারপর পরীক্ষা দিতে। তাই সবার আগে ভালোভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে এরপর পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

লিসেনিং এ ভালো করার উপায়

সাধারণত আইএলটিএস  এর সবথেকে সহজ পার্ট বলা হয় লিসেনিং  পার্ট কে ।কারণ লিসেনিং এ ভালো ব্যান্ড স্কোর পাওয়া তুলনামুলক ভাবে সহজ।তাই যারা ইংলিশ এ একটু দূর্বল তাদের উচিত এ পার্ট এ একটু বেশি স্কোর উঠানোর চেষ্টা করা।লিসেনিং এ সাধারণত ৪০ টা এমসিইকিউ টাইপ প্রশ্ন থাকে।প্রতিটা প্রশ্নের জন্য এক নাম্বার করে থাকে।অবশ্যই ৪০ টা প্রশ্নের মধ্যে প্রথম ১০ টা এবং শেষ এর ১০ টা সহজ হয়।লিসেনিং এ এমসিইকিউ টাইপ প্রশ্নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন টাইপ থাকে।লিসেনিং এ ভালো স্কোর তুলার জন্য প্রচুর প্র্যাকটিস করতে হবে।এক্ষেত্রে বিবিসি নিউস ,ইংলিশ মুভিজ দেখা,podcast শুনতে হবে।তাছাড়া ইউটিউব এ প্রতি বছরের আইএলটিএস এর রিয়েল এক্সাম এর প্রশ্ন এর মতো অনেক প্রশ্ন ও উত্তর থাকে তা দেখে প্র্যাকটিস করা যায়।কিন্তু আইএলটিএস এক্সাম এর সব থেকে অথেনথিক প্র্যাকটিস করার সোর্স হলো ক্যামব্রিজ এর আইএলটিএস সিরিজ।কারণ এগুলো ব্রিটিশ কাউন্সিল কর্তৃক প্রকাশিত হয় যেগুলা রিয়েল এক্সাম থেকে নেয়া হয়।নিয়মিত প্র্যাকটিস করলে প্রতিদিন একটা লিসেনিং টেস্ট দিলে সহজে একটা ভালো ব্যান্ড উঠানো যায় আইএলটিএস এ।

আরো পড়ুন: নিজেকে বিদেশে পড়াশোনার জন্য কিভাবে গড়ে তুলবেন  

রিডিং এ ভালো করার উপায়

আইএলটিএস এর সবচেয়ে কঠিন পার্ট দুইটির একটি হলো রিডিং এবং আর একটি হলো রাইটিং।রিডিং এই জন্য একটু কঠিন কারণ এখানে ৪০ টা প্রশ্ন এর উত্তর দিতে হয় ৩ টা প্যারাগ্রাফ পড়ে।সময় থাকে ৪০ মিনিট তাই অনেক দুরুত প্যারাগ্রাফ গুলা পড়ে শেষ করার জন্য সময় এর সাথে যুদ্ধ করতে হয়।এই জন্য অনেক স্পিড নিয়ে পড়তে হবে মানে স্কিমিং এন্ড স্কেনিং করতে হবে একই সাথে।তাই যাদের নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস আছে তারা খুব সহজে প্যাসেজ গুলা নির্দিষ্ট টাইম এর মধ্যে পড়ে শেষ করতে পারে এবং রিডিং এ একটা ভালো স্কোর তুলতে পারে।রিডিং এ ভালো করার জন্য যে জিনিসটা প্রয়োজন আগেও উল্লেখ করেছি দূরত পড়া এবং একই সাথে গুরত্বপূর্ণ বিষয় বুজতে পাড়া।তাই বেশি বেশি বই,সংবাদপত্র,ম্যাগাজিন,আর্টিকেল এগুলো পড়তে হবে সাথে শুরুর লাইন এবং শেষের লাইন পরে সম্পূর্ণ প্যাসেজ এ কি বলার চেষ্টা করছে সেটাও বুজতে পারতে হবে।রিডিং এও লিসেনিং এর মতো কেমব্রিজ এর আইএলটিএস সিরিজ থেকে প্র্যাকটিস করতে হবে।আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রিডিং এর ক্ষেত্রে যেটি না বললেই না সেটি হলো প্রচুর পারফ্রাসিং এর প্র্যাকটিস করতে হবে কারণ রিডিং পার্ট এ প্রশ্নের উত্তর প্যাসেজ এ থাকে কিন্তু সিনোনেম আকারে থাকে।আবার বিপরীত শব্দ দেয়া থাকে।তাই ওয়ার্ড এর সমার্থক এবং বিপর্থক শব্দের ভালো ধারণা থাকতে হবে যদি রিডিং এ ভালো স্কোর তুলার ইচ্ছা থাকে।

রাইটিং এ ভালো করার উপায়

রাইটিং এ ভালো করার জন্য যেটি সবচেয়ে বেশি দরকার সেটি হলো রাইটিং এ যে দুইটি পার্ট থাকে সেই দুইটি পার্ট  সম্বন্ধে ভালোভাবে আগে জানা।রাইটিং পার্ট টি আরো দুইটি পার্ট এ বিভক্ত যেগুলো হলো রাইটিং পার্ট ১ এবং রাইটিং পার্ট ২ ।রাইটিং পার্ট ১ এ ২০ মিনিটে ১৫০ থেকে ১৮০ শব্দের প্যারাগ্রাফ লিখতে হয় একটি ডায়াগ্রাম বা চার্ট বা টেবল থেকে।আর রাইটিং পার্ট ২ তে ২৫০ থেকে ২৮০ শব্দের মধ্যে একটি কম্পোসিশোন লিখতে হয় এবং এটি লিখার জন্য ৪০ মিনিট সময় পাওয়া যায়।সাধারণত কম্পোসিশন ৬ টাইপস এর মধ্যে থেকে এসে থাকে। তাই কিভাবে এই ৬ ধরনের কম্পোসিশন লিখতে হয় তা জানা থাকলে রাইটিং এ একটা মোটামোটি ভালো স্কোর পাওয়া যাবে যদি কেও ইংলিশ এ দুর্বল হয়ে থাকে।আর রাইটিং এঁর জন্য যেটা সবচেয়ে জরুরি সেটা হলো প্রচুর লিখার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং প্রতিদিন লিখলিখি করা।আর অব্যশই লিখার সময় গ্রামার এর দিকে নজর রাখা সাথে সিম্পল , কমপ্লেক্স এবং কম্পাউন্ড সেন্টেন্স ব্যবহার করা কারণ এটি অনেক গুরত্বপূর্ণ ভালো স্কোর পাওয়ার জন্য।লিসেসিং,রিডিং এর মতো রাইটিং এর জন্য ও অবশ্যই কেমব্রিজ এর আইএলটিএস সিরিজ থেকে প্র্যাকটিস করা।

স্পিকিং এ ভালো করার উপায়

স্পিকিং এর জন্য প্রচুর ইংলিশ এ কথা বলতে হবে এই জন্য সবথেকে ভালো উপায় হচ্ছে একজন স্পিকিং পার্টনার খুজে নেওয়া যে আপনার মত আইএলটিএস পরীক্ষা দিতে আগ্রহী।তাহলে যদি প্রতিদিন আপনারা দুইজন নূন্যতম এক ঘন্টা থেকে দেড় ঘন্টা ইংলিশে কথা বলেন তাহলে ইংলিশে কথা বলার সময় যে জড়তা থাকে সেটি অনেকটা কমে যাবে। স্পিকিংয়ে ভালো করার জন্য একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে সেটি হল কথা বলার সময় গ্রামারের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়া যাবে না ,কারণ যদি আপনি গ্রামারের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে চান তখন আপনার কথা বলাটা বারবার বাধাগ্রস্ত হবে এবং আপনার ব্যান্ড অনেক কম আসবে।অবশ্যই আইএলটিএস স্পিকিংয়ে ভালো স্কোর তোলার জন্য আপনি যখন কথা বলবেন তখন প্রতিটা শব্দের দিকে মনোযোগ দিবেন এবং যখন দুঃখের কোন বিষয় বলবেন তখন এর সাথে যখন খুশির মোমেন্ট শেয়ার করবেন তখন অবশ্যই বলার ধরন ভিন্ন হবে তাহলে ভালো ব্যান্ড পাওয়া যাবে।

আরো পড়ুন :ছাত্র জীবনে বাড়তি আয়ের উপায় 

পরিশেষে ,একটি কথা না বললে নয় সেটি হল আইএলটিএস এর রিয়েল পরীক্ষা দেওয়ার আগে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে কিছু মক টেস্ট দিবেন তাহলে নিজেকে যাচাই করতে পারবেন যে আপনি আইএলটিএস পরীক্ষার জন্য এখন ই প্রস্তুত নাকি আরো কিছুদিন প্র্যাকটিস করা দরকার।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url