পায়খানা কষা হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

সাধারণত আমাদের সমাজের বেশিরভাগ মানুষই কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভোগে।যার কারনে তাদের মধ্যে পায়খানা কষা হওয়ার মত কষ্টকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়।আমি আজকে আমার এই লেখাটির মাধ্যমে পায়খানা কষা হওয়ার কারণ ও তার প্রতিকার সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করবো।


পায়খানা কষা হওয়ার কারণ

  • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করা: পায়খানা কষা হওয়ার প্রথম কারণ হলো পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করা।অনেকের মধ্যে পানি কম পান করার প্রবণতা দেখা দেয় যার কারনে তারা কোষ্ঠকাঠিন্যের মত রোগে ভোগে।আর এই কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের জন্যই সাধারণত পায়খানা কষা হয়ে থাকে।
  • আশঁযুক্ত খাবার কম খাওয়া:যারা তাদের খাদ্য তালিকায় আশঁযুক্ত খাবার কম রাখে তারা সাধারণত পায়খানা কষা হওয়া সমস্যার সম্মুখীন হয়।
  • মাছ মাংস বেশি খাওয়া:সাধারণত যারা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে বেশি আক্রান্ত হয় তাদের মধ্যে দেখা যায় তারা তাদের খাদ্য তালিকায় বেশিরভাগ সময় মাছ মাংস রাখা পছন্দ করে।তারা খুব কমই শাক-সবজি খেয়ে থাকে।
  • শুকনা খাবার খাওয়া :পায়খানা কষা হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো শুকনা খাবার গ্রহণ করা।যারা পায়খানা কষা অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভোগে তারা বেশিরভাগ সময় শুকনা খাবার খায় অর্থাৎ তারা ভাত খাবার সময় তরকারির ঝোল খাওয়া পছন্দ করে না।
  • অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করলে :অনেক সময় যখন অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক সেবন করতে হয় তখন কিছুদিনের জন্য পায়খানা কষা হয়ে থাকে কিন্তু এটা কিছুদিন পরে ঠিক হয়ে যায়।এই অবস্থা বেশিদিন থাকে না।
  • কোন অপারেশন করলে :বিভিন্ন সময় অপারেশনের পরে সাধারণত ক্ষণস্থায়ী সময়ের জন্য পায়খানা কষা হয়ে থাকে।এটি এই কারণে যে ডাক্তাররা সাধারণত এমন ওষুধ দিয়ে থাকে যাতে রোগী দুই একদিন পায়খানা না করে এবং তার অপারেশনের জায়গাটা শুকাতে সময় পায়।এটিও অল্প কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যায়।
  • আয়রন ট্যাবলেটের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া :যাদের নিয়মিত আইরনের ওষুধ খেতে হয় তারা সাধারণত পায়খানা কষ্ট হওয়ার সমস্যায় পড়ে থাকে। এর কারণ হচ্ছে আইরন ওষুধ আমাদের মল কে শক্ত করে তোলে যার কারনে এটা কষা হয়ে যায়।
  • অধিক  পরিমাণে দুগ্ধ জাতীয় খাবার গ্রহণ করা:যারা অধিক পরিমাণে দুগ্ধ জাতীয় খাবার গ্রহণ করে তাকে তারা সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগে বেশি  ভোগে। কারণ দুগ্ধ জাতীয় খাবার মলকে শক্ত করে তোলে।

আরো পড়ুন :কমলার খোসার ১৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা

পায়খানা কষা হলে যা করণীয় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো 

যখন কোন ব্যক্তি পায়খানা কষা হওয়ার সমস্যায় পড়ে তখন সে চাইলে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গুলো অনুসরণ করে এর থেকে মুক্তি পেতে পারে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা :যদি কখনো কোন ব্যক্তির পায়খানা করা হয় তাহলে তার উচিত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা।কারন পানি আমাদের মলকে নরম করতে সাহায্য করে যার মাধ্যমে পায়খানা কষা হওয়ার রোগ থেকে  মুক্তি পেতে পারি।
  • প্রচুর শাকসবজি খাবার তালিকায় রাখা:খাবার তালিকায় প্রচুর পরিমাণ শাক-সবজি রাখলে অনেক ধরনের রোগ থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায়। কারণ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার তাকে যেটা আমাদের মনকে নরম করতে সাহায্য করে এবং কোনদিনও পায়খানা কষা হওয়ার মত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় না।তাই প্রত্যক্ষ ব্যক্তির উচিত তার খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাকসবজির রাখা। 
  • শুকনা ভাত না খাওয়া :ভাত খাবার সময় তরকারির ঝোল সাথে খাওয়া। শুকনা ভাত খাওয়া কোন ভাবে  উচিত নয় যদি কেউ পায়খানা কষা হওয়ার সমস্যায় পড়ে থাকে।
  • সকালে চিয়া সিড খাওয়া:প্রত্যক্ষ সুস্থ ব্যক্তির উচিত সকালে খালি পেটে এক গ্লাস চিয়া সিড ভেজানো পানি পান করা। এতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে যেটি আমাদের শরীরের অনেক মিনারেলের ঘাটতি  পূরণ করে।
  • ইসবগুলের ভুষি খাওয়া :কেউ যদি চিয়া সিড খাওয়া পছন্দ না করে থাকে তাহলে সে চাইলে ইসুবগুলির ভুষি খেতে পারে।ইসুবগুলের ভুষি পেট নরম করতে সাহায্য করে এবং সহজেই পায়খানা কষা হওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায় যদি নিয়মিত ভাবে নিয়মমাফিক খাওয়া যায়।
  • মাছ মাংস কম খাওয়া:প্রতিটা ব্যক্তির উচিত মাছ মাংস যত সম্ভব পারা যায় কম খাওয়া। এর বিভিন্ন কারণ আছে সব থেকে বড় কারণ হলো মাছ-মাংস অনেক রকমের রোগ বয়ে আনে।তার মধ্যে একটি হল পায়খানা কষা হওয়া থেকে শুরু করে কোষ্ঠকাঠিন্যর পর্যায়ে চলে যাওয়া। অবশ্যই যদি নিয়মমাফিক অল্প পরিমাণ খাওয়া হয় তাহলে এটাও অনেক জরুরী খাবার তালিকায় রাখা।কারণ আমাদের শরীরের প্রোটিনের প্রয়োজন পড়ে এবং প্রাণিজ প্রোটিন হচ্ছে সবথেকে সহজলভ্য মাধ্যম।
  • দুগ্ধ জাতীয় খাবার কম গ্রহণ করা :যারা পায়খানা কষা হওয়ার রোগে ভোগে তাদের উচিত দুগ্ধ জাতীয় খাবার গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া।কারণ দুগ্ধ জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকে যেটা মলকে শক্ত করে তাই যেই সব ব্যক্তি পায়খানা কষা তথা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভোগে তাদের উচিত দুগ্ধ জাতীয় খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়া। আর যদি গ্রহণ করে তাহলে খুব অল্প পরিমান খাওয়া।
পরিশেষে যে কথাটি না বললে নয় সেটি হলো, যদি পায়খানা খুব বেশি কষা হয়ে যায় এবং পায়খানার সাথে যদি রক্ত দেখা যায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোগটি  খুব বেশি পরিমাণ বেড়ে যায় যথাসম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারন পরবর্তীতে এটি মলদ্বারের ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগে পরিণত হতে পারে। তাই কখনো কোষ্ঠকাঠিন্যর সম্মুখীন হলে ডাক্তারের নিকট পরিদর্শন করতে হবে এবং উপরের উল্লেখিত পদক্ষেপ মেনে চলতে হবে তাহলে এই অবস্থা থেকে দ্রুত প্রতিকার পাওয়া সম্ভব হবে

আরো পড়ুন : কিভাবে নবজাতক শিশুর পরিচর্যা করবেন 



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url