ব্যাংক একাউন্ট খুলবেন কিভাবে

আমাদের মধ্যে অনেকে জানে না কিভাবে একটা ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে হয়।তারা প্রায় এই নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভোগে যে কিভাবে তারা একটা ব্যাংক একাউন্ট খুলবে।আমি আজকে আমার লেখাটিতে কিভাবে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হয় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

বয়স ১৮ হতে হবে 

বাংলাদেশের যে কোন ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে হলে বয়স অবশ্যই ১৮ বছর হতে হবে। ১৮ বছরের কম বয়সের কাউকে সাধারণত ব্যাংক একাউন্ট  খোলার জন্য অনুমোদন দেয়া হয় না।তাই যে ব্যক্তি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চাই তার বয়স অবশ্যই ১৮ বছর হতে হবে।

আরো পড়ুন :নগদ থেকে বিকাশে টাকা ট্রান্সফার করার নিয়ম

জাতীয় পরিচয় পত্র থাকতে হবে 

প্রত্যক্ষ ব্যক্তি  ব্যাংকে  একাউন্ট করার সময় তার জাতীয় পরিচয় পত্রের একটি ফটোকপি জমা দিতে হয় তাই যে ব্যক্তি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট  খুলতে চাই তার অবশ্যই একটি জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে।কারো যদি জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকে তাহলে সে তার জন্ম সনদপত্র ব্যবহার করতে পারবে।আর কোন ব্যক্তি যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকে কিন্তু বিদেশে অবস্থানরত অবস্থায় থাকে তাহলে সে তার পাসপোর্ট কপি দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবে। 

দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি 

ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য তিন নাম্বার যে জিনিসটি প্রয়োজন পড়বে সেটি হলো সদ্য  তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড অবশ্যই সাদা হতে হবে। ছবিটি অবশ্যই ফরমাল গেটাপে হতে হবে এবং ভালোভাবে বোঝা যায় এমন হতে হবে না হলে গ্রহণযোগ্য হবে না। 

মোবাইল নাম্বার দিতে হবে 

ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য আবেদনকারীর অবশ্যই একটি মোবাইল নাম্বার দিতে হবে। মোবাইল নাম্বার এখানে এইজন্য প্রয়োজন পড়ে যাতে পরবর্তীতে কোন কিছু দরকার হলে আবেদনকারীর সাথে যাতে যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকে। মোবাইল নাম্বার দেয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ না কিন্তু মোবাইল নাম্বার না দিলে ব্যাংক থেকে পরবর্তীতে যোগাযোগ করতে অসুবিধা হয়ে যাবে। 

 আরো পড়ুন :বিকাশ লেনদেন স্টেটমেন্ট যেভাবে পাবেন

নমিনি নির্বাচন করতে হবে 

ব্যাংক একাউন্ট খোলার সময় অবশ্যই আপনার একজন নমিনি নির্বাচন করতে হবে। নমিনি হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে আপনার অবর্তমানে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টটা দেখাশোনা করবে এবং ব্যাংক একাউন্টের মালিক হবে।তাই ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আবেদনকারী একটি নমিনির তথ্য দিয়ে থাকে।নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম সনদপত্র  এবং ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি জমা দিতে হবে।

একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি

ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি থাকে।এটি অবশ্যই ব্যাংক পেতে বিভিন্ন পরিমাণ হয়ে থাকে।তাছাড়া এই টাকাটা আবেদনকারীর বইয়ের জমা থাকে তাই এটা নিয়ে টেনশন করার কিছু নাই।এটা পরবর্তীতে আবেদনকারী চাইলে যেকোনো সময় তুলে ফেলতে পারে।

উপরে সকল বিষয়গুলো হচ্ছে যদি আপনি সেভিং একাউন্ট খুলতে চান। এছাড়া ব্যাংকে অনেক রকমের অ্যাকাউন্ট আছে।যেমন :কারেন্ট একাউন্ট,ডিপিএস একাউন্ট, এফডিআর একাউন্ট।
  1. কারেন্ট একাউন্ট :এটি সাধারণত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য খোলা হয়ে থাকে। এই অ্যাকাউন্টটি সাধারণ ব্যক্তি বা ছাত্রদের জন্য নয়। একাউন্টে কোন প্রকারের সুদ দেয়া হয় না বরঞ্চ বছর শেষে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ  সার্ভিস চার্জ কেটে রাখা হয়।কারেন্ট ব্যাংক একাউন্টের জন্য কিছু বাড়তি কাগজ লাগে যা সেভিংস একাউন্টে লাগেনা তা হলো  প্রত্যক্ষ  মালিকের পদবিসহ একদিন নির্দিষ্ট সিল, ট্রেড  লাইসেন্স, যদি একের অধিক মালিক থাকে তাহলে সবার রেজুলেশন লেটার।
  2. ডিপিএস একাউন্ট :এই ধরনের অ্যাকাউন্টে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রতি মাসে জমা রাখতে হয়। সাধারণতো ৫০০ টাকা থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা রাখা যায়।এই জমারাখা কে কিস্তি বলা হয়।ডিপিএস অ্যাকাউন্ট সাধারণত ৫ বছর ১০ বছর কিংবা ২০ বছর মেয়াদী হয়ে থাকে।এই জমা রাখা টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যাংক বিভিন্ন রকমের সুদ দিয়ে থাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সময়ের ব্যবধানে।
  3. এফডিআর একাউন্ট :এফডিআর একাউন্ট কিংবা ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট হলো এমন একটা একাউন্ট যেখানে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখতে হয় এবং কিছু বছর পরে এগুলা তুললে কিছু লাভ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে  সাধারণত জমাকৃত টাকার পরিমাণ পঁচিশ হাজার থেকে শুরু করে এক কোটি টাকা পর্যন্ত রাখা যায়। 
এছাড়াও আরও কিছু জিনিস আছে যেগুলা বললে চলবে না।যে বিষয়গুলো  আপনাকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে তা নিম্নে তুলে ধরা হলো :
  • যে সকল কাগজের ফটোকপি জমা দিবেন সেই সব কাগজের মূল কপি সাথে রাখুন। 
  • আবেদনকারী যেদিন একাউন্ট খুলবে এবং যে দিন হিসাব বই গ্রহণ করবে সেদিন অবশ্যই আবেদনকারীর  যেতে হবে।
  • যেদিন আবেদনকারী ব্যাংক একাউন্ট খুলবে সেদিনই চেক বই পাওয়ার জন্য একটি ফরম পূরণ করে আসতে হবে।
  • ব্যাংক থেকে বর্তমান ঠিকানায় একটি চিঠি আসতে পারে এ বিষয়টি  অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
  • জমাকৃত টাকার রশিদ বুঝে নিবেন এবং হিসাব নম্বর সংরক্ষণ করবেন।
আশা করি আজকের এই লেখাটি পড়ে কিভাবে একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলবেন এবং ব্যাংকে কত রকমের অ্যাকাউন্ট থাকে এ বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়া গেলো। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url